বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। নির্বাচনের আগে থেকেই তিনি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যে কু–কথার বন্যা বইয়ে দিতে শুরু করেছিলেন, তা অব্যাহত এখনও। নারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত ৪ নেতা–মন্ত্রী, প্রাক্তন মন্ত্রীর গ্রেফতারির পর থেকেই রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে যা নয়, তা–ই বলে যাচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। রবিবার যেন সেইসব সীমাও পেরিয়ে গেলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ। এদিন রাজ্যপাল পদ থেকে সরে গেলে জগদীপ ধনখড়কে প্রেসিডেন্সি জেলে ঢোকানোরও হুমকি দিলেন সংবাদ মাধ্যমের কাছে। অবশ্য জবাবও পেয়েছেন তিনি। অত্যন্ত শালীনতার সঙ্গে রাজ্যপাল বলেছেন, একজন আইনজীবীর মুখে এমন বক্তব্য শোভনীয় নয়। মানুষই এর বিচার করবেন। অন্যদিকে, রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য কড়া ভাষায় বলেছেন, এ কথার মধ্য দিয়ে সংবিধানকেই চ্যালেঞ্জ করছে তৃণমূল। তাঁর সমালোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও।
কয়েকদিন আগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে ‘রক্তচোষা’ বলেছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, কুকুরের প্রসঙ্গও টেনে এনেছিলেন। রবিবার তিনি বলেন, ‘সারাদিন ধরেই রাজ্যপাল তৃণমূলের পিছনে লেগে রয়েছেন। তিনি একটা রক্তচোষা। তাঁর ও তাঁর সঙ্গে যাঁরা থাকেন, তাঁদের ফোনের কললিস্ট খতিয়ে দেখা উচিত। তা হলেই প্রমাণ হয়ে যাবে রাজ্যপালের মদতেই তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘রাজ্যপালই নিজে এই গ্রেফতার করিয়েছেন।’ এদিন রাজ্যপালকে তিনি ‘সংবিধানের কসাই’ বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা যায় না। কিন্তু তিনি সারাজীবন ওই পদে থাকবেন না। একদিন তাঁকে পদ ছেড়ে সরতেই হবে। তাই তৃণমূল কর্মীরা এখন থেকেই প্রতিটি থানায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করে রাখুন। যখন তিনি রাজ্যপাল থাকবেন না, তখন তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। হয়তো তখন এখানকার প্রেসিডেন্সি জেলেই তাঁকে এনে ঢোকানো হবে।’ তাঁর এমন ‘কুৎসিত’ মন্তব্য ভারতীয় রাজনীতিতে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন অনেকেই।
উল্লেখ্য, সোমবার নারদকাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। এখন তাঁরা বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের সমর্থনে তৃণমূল নেতারা মুখ খুলেছেন। তাঁরা সকলেই রাজ্যপালকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। এখনও অশোভনীয় ভাষায় তীব্র সমালোচনা করে চলেছেন রাজ্যপালের। রবিবার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য আহত করেছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে। সাংসদ তথা আইনজীবী হয়েও একজনের এমন ধরনের মন্তব্যে তিনি রীতিমতো স্তম্ভিত বলে টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন প্রবীণ নেতা এবং সাংসদ। আবার আইনজীবী হিসেবেও তিনি বেশ অভিজ্ঞ। সেই তিনি কী করে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন, তা বুঝতে পারছি না। আমি জানি, বাংলার মানুষ সংস্কৃতিমনস্ক। সারা ভারতে এমন সংস্কৃতিমনস্ক জাতির তুলনা নেই। তাঁরাই তাঁর এমন আপত্তিকর মন্তব্যের বিচার করবেন।’
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। এদিন তিনি বলেন, ‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন আইনজীবী। তা সত্ত্বেও তিনি এমন মন্তব্য অবলীলায় করে চলেছেন। তাঁর দলও তাঁকে এমন আপত্তিকর মন্তব্য করা থেকে বিরত করে না। এর অর্থ এই যে, তিনি এবং তাঁর দল সংবিধান মানে না। সংবিধানের বিরুদ্ধে যায়, এমন সব কথা বলতে এবং সেইসব কথাকে অনুমোদন দিতেই তারা পছন্দ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে সংবিধানের বক্তব্য তাঁর জানা উচিত। কিন্তু তিনি সে সবের তোয়াক্কা করেন না। তাঁর দলও এ ভাবেই কথা বলে। সেই সুরেই তিনি এমন সব কথা বলে চলেছেন। রাজ্যের সাংবিধানিক ভিত্তিটাই এ ভাবে তৃণমূল সরকার নষ্ট করে দিতে চাইছে।’
কল্যাণবাবুর মন্তব্যের জবাবে মুখ খুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তিনি বলেছেন, ‘কল্যাণবাবু উন্মাদ হয়ে গিয়েছেন। তাই উন্মাদের মতোই কথা বলছেন। তাঁর দল তৃণমূলেই তাঁর কোনও গুরুত্ব নেই। তাই এমন কথা বলে সংবাদে থাকতে চাইছেন।’